মাদক ক্যান্সারের চেয়েও ভয়ঙ্কর

PIN মাদক ক্যান্সারের চেয়েও ভয়ঙ্কর

গত কয়েক দিন ধরেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারাদেশে  চলছে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান। হতাশ, শঙ্কিত জনগণের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। মানুষ আশায় বুক বাঁঁধছে যে, আগামী প্রজন্ম মাদকের করালগ্রাস থেকে রেহাই পাবে এবার। উন্নত-অনুন্নত অনেক দেশই মাদকের নির্মম ছোবলের শিকার। যে ছোবল মানুষের অতি মূল্যবান জীবন তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়। চিকিত্সা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে ক্যান্সার চিকিত্সায় ভালো হয় কিন্তু মাদকসেবী ভালো হওয়ার নজির নাই বললেই চলে। মাদককে ক্যান্সার বললে তাই কিছুটা ভুল হবে। মাদক ক্যান্সারের চেয়েও ভয়ঙ্কর।

কিছু অসাধু মানুষ এই মাদক ব্যবসাকে পুঁজি করে গড়ে তুলছে সম্পদের পাহাড়। অসাধু এ ব্যবসায়ীদের ভয়াবহ থাবায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের যুবসমাজ। একক ব্যক্তি নয়, পুরো জাতিকে হত্যা করছে এসব ব্যবসায়ী। অস্থীতিশীল করে তুলছে সমাজ ব্যবস্থাকে। মাদকের সহজলভ্যতার কারণেই বিভিন্ন ধরনের মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে যুবসমাজ। যে কারণে দেখা দিয়েছে সামাজিক অবক্ষয়। মাদক এখন জাতির অভিশাপ।

মাদক এখন শুধু রাজধানী কিংবা জেলা শহরগুলোতেই নয়— মরণ এ নেশার দ্রব্য বিস্তৃতি পেয়েছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও। মাদকের বিষাক্ত এ ছোবল গ্রাস করে চলেছে নতুন প্রজন্মকে। পরিণামে অকালে ঝরে পড়ছে বহু তাজা প্রাণ। শূন্য হচ্ছে অনেক মায়ের বুক। সন্তানহারা মা-বাবার আহাজারিতে দিন দিন ভারি হচ্ছে বাতাস। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোতে এখন শুধু শোকের মাতম। কারা সৃষ্টি করছে এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতি? কারা ছড়িয়ে দিচ্ছে এ ভয়ানক আতঙ্ক? কারা কেড়ে নিচ্ছে মায়ের বুক থেকে তার প্রিয় সন্তানকে, দায়ী কারা? আজ আমরা এমনই এক বৈরী পরিবেশে কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি।

আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে বিচরণ করছে সর্বনাশা মাদক। ঘুণ পোকার মতো কুরে কুরে খাচ্ছে মানব অস্থিমজ্জা। এ ভয়ানক পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব। অভিভাবকরা আতঙ্কিত, উত্কণ্ঠিত। তারা শঙ্কিত কখন মাদকের স্রোতে দিক হারিয়ে নেশার জালে আটকা পড়ে যায় তাদের প্রিয় সন্তান।

জনশ্রুতি আছে— কোনো পরিবারকে যদি ধ্বংস করতে চাও তবে সেই পরিবারের একজন সদস্যকে মাদকাসক্ত করে দাও। নতুন করে আর শত্রুতা করা লাগবে না। একটি দেশকে ধ্বংস করতে তরুণ প্রজন্মের হাতে মাদক তুলে দিলেই যথেষ্ট। পাশাপাশি জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্র-জাতীয়তাবাদের বীজ বুনে দিলে সেই জাতি ধীরে ধীরে পঙ্গু হয়ে যাবে।

উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের পথচলাকে সুগম করতে এই সমাজ থেকে মাদককে চিরতরে নির্মূল করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা ঘোষণা করেছেন। মাদক নির্মূলে কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছে, দেশের সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষ। মাদক ব্যবসায়ী যে দলেরই হোক না কেন তাদেরকে কোনো রকম যেন ছাড় দেওয়া না হয়। আর  মাদকসেবীকে  সংশোধনাগারে রেখে সুস্থ মানুষ হিসেবে সমাজ ও পরিবারে  ফিরে আসতে সহযোগিতা করা হোক। এটাই চাওয়া সাধারণ মানুষের।

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। গুলশান এবং শোলাকিয়ার জঙ্গি হামলা দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যেভাবে সফল হয়েছে তা দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বে একটা অনন্য নজির হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ কথা আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়েও আমাদের দেশে জঙ্গি দমনে জননেত্রী শেখ হাসিনা সফলতার যে নজির দেখিয়েছেন তা অনুপ্রেরণায় অনন্য।

শান্তিপ্রিয় আমজনতা আশা করছে ইসলামের কালজয়ী শিক্ষা যার বুকে সেই মহান রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাই পারবেন বাংলাদেশকে মাদকমুক্ত  করে আগামী  প্রজন্মের জন্য একটি মাদকমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের স্বপ্ন, আমরা পৌঁছাব মধ্যম আয়ের দেশে, শক্তিশালী হবে আমাদের অর্থনীতির ভিত, মাদকের ঘুণপোকা কেন তাকে কুরে কুরে খাবে ? আর দেরি নয় জেগে ওঠো জাতি, জেগে ওঠো জনপদ, জেগে ওঠো নূর হোসেন, নূরুল দীনেরা। সকলের দৃপ্ত শ্লোগান হোক, ‘জঙ্গি-সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূল সবার আগে, তবেই সোনার বাংলা পাবে। আমাদের দেশের মূল সম্পদ হচ্ছে জনশক্তি।

পরিবার, সমাজ, দেশ বাঁচাতে যুব সমাজকে মাদক থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আর এটা শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই। মাদকাসক্তি তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে যে মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতাবোধ, নৈতিক স্খলন, মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং অপরাধ প্রবণতার জন্ম দিচ্ছে তা সমাজ জীবনের গতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা অপরিহার্য। ছাত্র শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী, ধর্মগুরু এবং আলেম উলামাগণসহ সচেতন মানুষের সমবেত প্রচেষ্টায় সমাজ থেকে নির্মূল হতে পারে মাদকের মরণ নেশা। মাদকাসক্তিমুক্ত হতে পারে পথভ্রষ্ট মানুষ।