বঙ্গবন্ধু অন্তপ্রান গফরগাঁওয়ের ভ্যান চালক হাসমত আলী শুধু ভ্যান চালাতো না, থাকতো মিছিলে মিটিং এ। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা ইতিহাসের নিশংসতম হত্যাকান্ডের স্বীকার হলে হাসমত আলী বঙ্গবন্ধুর এতিম দুই মেয়ের জন্য এক খণ্ড জমি কিনেন। ভ্যান চালিয়ে সারাজীবনের জমানো টাকায় একজন আসমত আলী ৭ শতাংশ জমি কিনেন শেখ হাসিনার নামে। হাসমত আলীর বৃদ্ধা স্ত্রী যখন জমির দলিল নিয়ে ঘুড়াঘুরি করছিল তখন পত্রিকা মাধ্যমে তা শেখ হাসিনার চোখে পড়ে। তিনি তৎক্ষণাৎ হাসমত আলীর স্ত্রী রমিজা খাতুনকে খুজে বের করেন। রমিজা খাতুনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়া সহ তার সেই জমিতে বাড়ি বানিয়ে দেন শেখ হাসিনা। এবং ২০১১ সালের ৩০শে এপ্রিল রমিজা খাতুনকে সেই ঘরে উঠিয়ে দিয়ে আসেন তিনি। তিনি একজনই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এক লাইনে বা শব্দে তার কথা বলা সম্ভব নয়। বর্তমান রাজনীতিতে তৃণমূল নিয়ে যখন অনেক রাজনীতিবিদ মাথা ঘামায় না, শেখ হাসিনা তখন তৃণমূলকে প্রাধান্য দেয়। শুনেছি সেই তৃণমূল এর প্রত্যেক নেতাকর্মীদের সাথে তার রয়েছে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ।
মহানুভবতার অনন্য দৃষ্টান্ত তিনি। তার কাছ থেকে কেউ খালি হাতে ফেরেনি। তার সাথে সাধারন মানুষের যোগাযোগও খুবই সাধারন ব্যাপার। শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি সংসদ ভবনের নিজের রুমে ৩য় লিঙ্গের মানুষদের সাথে কথা বলেছেন, বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। শুধু তাই নয় পবিত্র ঈদ-উল-আযহায় কোরবানীর জন্য তাদের গরু দিয়েছিলেন তিনি। এমনই মানুষ শেখ হাসিনা, তার বাবার মতোই সাহসী, দয়ালু, অদম্য, অকুতোভয়।
ভালবাসার এক বিরল দৃষ্টান্ত শেখ হাসিনা, ছোট শিমু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবাই তার আপনজন। আমরা দেখেছি গণভবনে অনেক কাজের মধ্যেও নিজের নাতি-নাতনীদের সাথে তাকে সময় কাটাতে, শুধু নিজের নাতি নাতনি দের সাথেই নয় নেতা-কর্মি বা গণভবনের কর্মকর্তাদের ছোট ছেলেমেয়েদের কোলে নিয়ে গণভবন চত্বরে সময় কাটান তিনি।
মায়ের মমতা অসীম। মায়ের মমতার সাথে তুলনা হয়না পৃথিবীর কোন আদর মমতার। তাইতো শত ব্যস্ত শেখ হাসিনা তার নিজের ছেলের জন্মদিনে ছেলের পছন্দের বিরিয়ানি রান্না করতে ভুলেন না।
তিনি মানুষকে ভালবাসেন অন্তর থেকে তাইতো তার প্রিয় শিক্ষক এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যার এর জন্মদিনে ফুল পাঠাতে ভুলেননি। ভুলেননি খুব সকালে চ্যানেল আইয়ের সকালের অনুষ্ঠানে ফোন করে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে।
“মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না”। বিখ্যাত সংগীত শিল্পী ভুপেন হাজারিকার এই বিখ্যাত গান এর মতোই মানুষের সেবায়, মানবতার এক অনন্য নজির শেখ হাসিনা। ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে বিশ্বকে দেখিয়েছেন বাংলাদেশ কতটা মনবতাবাদী একটা দেশ। তার কন্ঠে ছিল একই কথা ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে ১১ লাখকেও পারবো। কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে ছুটে গেছেন তিনি। রোহিঙ্গাদের কষ্টে আবেগে আপ্লুত হয়েছেন তিনি। তার চাইতে বেশি দরদ দিয়ে কেউ রোহিঙ্গাদের আগলে রাখেনি। তাইতো তাকে সবাই ডাকে “মাদার অফ হিউম্যানিটি”।
শত্রুরও বন্ধু তিনি। কারও সাথে শত্রুতা নয়। সবার সাথে বন্ধুত্ব নীতিতেই চলেন তিনি। এই নীতিতেই প্রতিবেশী দেশ সহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সফল তিনি। যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ এ আমাদের ৩০ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছিল সেই তাদেরই দোসররা আজও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে বাংলাদেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে। কিন্তু এসবেও বিচলিত নন তিনি। সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে তিনি বাংলাদেশকে পৌছে দিচ্ছেন উন্নয়ন আগ্রযাত্রার সর্বোচ্চ চূড়ায়। তাইতো পাকিস্তানি বুদ্ধিজীবিরা এখন বলছে আমাদের দেশকে(পাকিস্তানকে) বাংলাদেশ বানিয়ে দাও।
সমাজে পিছিয়ে পড়া নারীদের পাশে তিনি। নারী সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি কাজ করে চলেছেন অবিরত। এ কারনেই বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জায়গায় নারীরা যেন ব্যবসা, চাকরী এবং ঘরে বসেই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে তার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। দুস্থ অসহায়দের জন্য করেছেন আশ্রয় প্রকল্প, বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, চিকিৎসার জন্য করেছেন কমিউনিটি হেলথ সেন্টার।
অবিরত মানুষের এবং দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা নিজের জন্য যার একটুও সময় নাই। বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর কাছে তিনি এমনই একজন নেতা ও প্রধানমন্ত্রী যিনি কিনা যেকোন সাংবাদিক/সাংবাদিকদের সাথে অবলীলায় কথা বলে। সাংবাদিকরা তাকে যেকোন প্রশ্ন করতে পারেন নির্দিধায়। যা বাংলাদেশের বিগত কোন রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষেত্রে কখনোই দেখা যায়নি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে গ্রেফতার করার পর তিনি মোটেও বিচলিত হননি। সেই সময় তিনি নামাজ পড়েছেন, কোরআন পড়েছেন আর বাকি সময়টুকুতে বই লিখেছেন। সেই “সবুজ মাঠ পেড়িয়ে” বইয়ে তিনি লিখেছেন এদেশের মানুষের কথা, তাদের অধিকার আদায়ের কথা। লিখেছেন নির্বাচনে কিভাবে অন্য দলগুলি মনোনয়ন বানিজ্য করে। আরো লিখেছেন কিভাবে একজন কারারক্ষীকে তিনি পড়িয়েছেন। “মুসা ইব্রাহীম” এর এভারেস্ট জয় এর ঘটনা নিয়েও তিনি একটা লেখা লিখেছিলেন “সুন্দরবন থেকে হিমালয়” যা পরবর্তিতে প্রকাশ হয়েছিল কিনা জানি না।
কিন্তু একজন রাষ্ট্রনায়কের কি চাওয়ার কিছুই নেই? এই প্রশ্ন মনে আসতেই পারে। হ্যা তার চাওয়া তার বাবার সোনার বাংলাকে গড়ে তোলা। বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে আরও শক্তিশালী করা। তিনি একজন মা-হারা, বাবা- হারা, ভাই-হারা, আত্মীয় পরিজন হারা জননী। কিন্তু মায়ের প্রতিকৃতি তিনি খুঁজে পেতেন কবি সুফিয়া কামালের মধ্যে।
এমন একজন মা, কন্যা, রাষ্ট্র নায়কই আমাদের দরকার ছিল এই সোনার বাংলায়। আল্লাহ্ পাক এদেশের মানুষের কথা শুনেছেন। তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন এই দেশটাকে সোনার বাংলা করে গড়ে তুলতে। তাইতো বাংলাদেশের “জননী” শেখ হাসিনা কে জন্মদিনে নিরন্তর শুভকামনা।
শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন “সবার উপর মানুষ সত্য” তিনি বিশ্বাস করেন মানবের তরে এ পৃথিবী, দানবের তরে নয়।