বাংলাদেশের মহাকাশ জয়

PIN বাংলাদেশের মহাকাশ জয়

বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। স্বপ্ন ডানা মিলবে আকাশে, মহাকাশে এই কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে আরেকটি স্বপ্নের দুয়ার খুলবে বাংলাদেশের। প্রবেশ করতে যাচ্ছে স্যাটেলাইট যুগে। শুরু হতে যাচ্ছে নবযুগের নবসূচনা।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে যুক্ত হবে নতুন এক অধ্যায়ের। যে অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে, বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ স্থাপনের মাধ্যমে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন স্বপ্নের যে বীজ বুনেছিলেন, তার পথ ধরেই আজ আকাশে উড়ছে দেশের প্রথম নিজস্ব স্যাটেলাইট।

এর নামও জাতির পিতার নামেই, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী পরিকল্পনা, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান এবং দিকনির্দেশনায় বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রবেশ করতে যাচ্ছে গৌরবময় বিশ্ব স্যাটেলাইট ক্লাবে।

আন্তর্জাতিক বিশ্ব বলছে, খুব কম দেশেই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আগেই আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে এতো এতো উন্নয়নের উদাহরণ আছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ যখন তার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের তিন বছর আগে মহাকাশ যাত্রার মাইলফলক অর্জন করতে যাচ্ছে ঠিক এর ৬১ বছর আগে মহাকাশে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন।

১৯৫৭ সালে উৎক্ষেপিত সেই কৃত্রিম উপগ্রহটির নাম ছিল স্পুটনিক-১। ২০০৮ সালে এ প্রকল্পের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। দু’বছর পর ২০১০ সালে প্রকল্পের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরে ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদন পায়।

এ সময় প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় দুই হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক হাজার ৩১৫ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে এবং বাকি টাকা সংশ্নিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে। তবে প্রকল্প শেষে প্রকল্প ব্যয় কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

আমাদের দেশের স্যাটেলাইট না থাকায় এতোদিন দেশের টেলিভিশন চ্যানেল, টেলিফোন ও রেডিও বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়ায় ব্যবহার করতো । এতে প্রতি বছর ভাড়া বাবদ বাংলাদেশকে ১১০ কোটি টাকা ভাড়া গুনতে হতো। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চালু হলে দেশে এই বৈদেশিক মুদ্রারই সাশ্রয় হবে। সেই সাথে ব্যাপকভাবে স্যাটেলাইটে মহাকাশ বা জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, টিভি বা রেডিও চ্যানেল, ফোন, মোবাইল ও ইন্টারনেট যোগাযোগ প্রযুক্তি, নেভিগেশন বা জাহাজের ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনায়, পরিদর্শন– পরিক্রমা (সামরিক ক্ষেত্রে শত্রুর অবস্থান জানার জন্য) এটি দারুণ কাজে আসবে।

এছাড়া দূর সংবেদনশীল তথ্যে, মাটি বা পানির নিচে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজে, মহাশূন্য এক্সপ্লোরেশন, ছবি তোলার কাজে, হারিকেন-ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস, গ্লোবাল পজিশনিং বা জি পি এস, গামা রে বারস্ট ডিটেকশন করতে, পারমাণবিক বিস্ফোরণ এবং আসন্ন হামলা ছাড়াও স্থল সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য ইন্টিলিজেন্স সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা পেতে, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিভিন্ন খনি শনাক্তকরণ, ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি করাসহ অত্যাধুনিক অনেক কাজেই বিভিন্ন ধরনের স্যাটেলাইটের সুফল পাবে বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২০টি দেশের ব্যবহারের জন্য রেখে বাকিগুলো অন্যান্য দেশের কাছে বিক্রি করা হবে। অব্যবহৃত এই অংশ নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের মতো দেশে ভাড়া দিয়ে প্রতি বছর ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা যাবে। স্যাটেলাইট পাঠানোর কাজটি বিদেশে হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাংলাদেশ থেকেই।

এ জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে; যা নিয়ন্ত্রণে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনের যন্ত্রপাতিও আমদানি করেছে বিটিআরসি।

বাংলাদেশ তাকিয়ে আছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের দিকে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সফলভাবে সম্পন্ন হোক- এটিই প্রত্যাশা।