রাজনৈতিক ক্ষমতাধর পদে না থেকেও মানুষের জন্য কাজ করার এক অনন্য উদাহরণ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। গুণী বাবা ও মায়ের মতোই গ্ল্যামারের বাইরে থেকে মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন তিনি। আর তার কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশকেও তিনি নিয়ে যাচ্ছেন আরেক উচ্চতায়।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এখন একজন বিশ্বখ্যাত মনোবিজ্ঞানী। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য। তার কাজের প্রশংসা বিশ্বজুড়ে।
অটিজম বা অটিস্টিক আমাদের দেশের খুব পরিচিত একটি বুদ্ধি বিকাশ জনিত সমস্যা। যেটাকে আগে আমরা পাগল বা প্রতিবন্ধী হিসেবে জানতাম। অটিজম নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম কাজ করতে এগিয়ে আসেন সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল। যিনি বাংলাদেশের মানুষকে তার কাজের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, অটিজম কোনো জিন-পরির আসর না, বা পাপের বিষয় নয়- এটি স্রেফ একটি মানসিক অবস্থা। সঠিকভাবে চিকিৎসা করলে এর প্রতিকার সম্ভব। অটিজম নিয়ে কাজ করার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’ নামের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।
১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় জন্ম সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের। ১৯৭৫ পরবর্তী প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। মা ও বাবার সঙ্গে নির্বাসিত জীবনও কাটাতে হয়েছে তাকে। অত্যন্ত অনিরাপদ ও দুর্বিষহ জীবনেও বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য সদস্যদের মতোই উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন সায়মা ওয়াজেদ।
অত্যন্ত শক্তিশালী এক একাডেমিক ক্যারিয়ার রয়েছেন সায়মা ওয়াজেদের। ১৯৯৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক এবং ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল মনস্তত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী তিনি। ২০০৪ সালে স্কুল মনস্তত্বে বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার একাডেমি অব সায়েন্স কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত হয়। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সৃষ্টিশীল নারী নেতৃত্বের ১০০ জনের তালিকায়ও স্থান করে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ।
তিনি ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়বিক জটিলতাসংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ করছেন। স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ব সংস্থা কর্তৃক ২০০৪ সালে হু অ্যাক্সিলেন্স পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৩ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞ পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
মানসেবার ব্রত উত্তরাধীকার সূত্রেই পেয়েছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। নানী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা, নানা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মা দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও বাবা পরমাণু বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়া। প্রত্যেকেই নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন মানবসেবায়। পরিবারের সেই ধারা বজায় থেকেছে সায়মা ওয়াজেদের কর্মকাণ্ডেও।
অটিস্টিক শিশুকে নিয়ে যখন পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশের সমাজে বাবা-মা অত্যন্ত বিব্রতকর অবস্থায় পড়তেন, অটিস্টিক শিশুর জীবন যেখানে ছিল নরকসম তখন তাদের পক্ষে দাঁড়ান সায়মা ওয়াজেদ। তিনি বাংলাদেশের মানুষকে বুঝাতে সক্ষম হন, অটিজম স্রেফ একটা রোগ; সঠিক চিকিৎসায় যার প্রতিকার হয়। অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা বরং বিশেষভাবে সক্ষম।
আজ সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্মদিন। পুতুল আপাকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।