অনেক কাঙ্ক্ষিত ‘ভোট’-এর পথে বাংলাদেশ। মহাজোট সরকার ২য় মেয়াদে সরকার গঠনের পাঁচ বছর পর আবার ভোটের পথে বাংলাদেশ। আগামী ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশে সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটা সুন্দর ভোটের দিন আমরা দেখতে পাবো আশা করি।
এবার ভোটের গুরুত্ব এবং তাত্পর্য অনেকখানি। শুরুতে বিএনপি জামায়াত জোট বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে আসবে না এমন কথা বললেও পরবর্তীকালে ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
শেষ মুহূর্তে বিএনপির নির্বাচনে আসার মাধ্যমে দুইটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, এক, বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে হলে অবশ্যই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই আসতে হবে, জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেশের অগ্রগতিকে থমকে দিয়ে এই বাংলাদেশে আর কখনোই কোনো দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এই বাংলাদেশে মানুষের জীবন আর কখনোই ক্ষমতা পরিবর্তনের হাতিয়ার হতে পারবে না। বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ এটা আর হতে দিবে না। দুই, বাংলাদেশের আপামর জনগণসহ প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মীদের ভোটে অংশগ্রহণ করার চাপ ছিল। বিএনপি তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ব্যর্থতায় অনেক বছর ধরে রাষ্ট্রক্ষমতার বাহিরে থাকায় তাদের কর্মীরাও এটা বুঝতে পেরেছিল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করাটা ছিল বিএনপির সবচাইতে বড় রাজনৈতিক ভুল, বিএনপির মাঠ পর্যায়ের এই নেতাকর্মীরা তাই কেন্দ্রের উপর ছিল বিরক্ত এবং অসন্তুষ্ট। যার প্রকাশ আমরা দেখতে পাই গত কয়েক বছরে বিএনপি একাধিকবার আন্দোনলের চেষ্টা করলেও তাদের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কখনো রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি। তাই বলাই যায় এবার বিএনপির ভোটে আসার কারণ যতটা না তাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের দূরদর্শিতা তার চাইতে অনেক বেশি তাদের মাঠ পর্যাদের নেতাকর্মীদের চাপ।
এবারো যদি বিএনপি ভোটে অংশগ্রহণ না করতো তাহলে দল হিসেবে বিএনপির অস্তিত্বের সংকট শুরু হতো। অবশ্য বিএনপিকে পথ দেখাতে সাহায্য করেছে আওয়ামী লীগ থেকে বিতাড়িত, বিতর্কিত লোকজন। এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে, যাদের মুখ দেখা যাচ্ছে তারা ছিলেন একসময়ের আওয়ামী লীগার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এইসব বিতাড়িত নেতারা নানা ধরনের মিথ্যাচার শুরু করলে বঙ্গবন্ধু কন্যা গণভবনে তাদের আপ্যায়ন করেন, তাদের কথা শুনেন এবং জনগণকে আশ্বস্ত করেন। জনগণ যাদের ভোট দিবে তারাই সরকার গঠন করবে, এর কোনো ব্যত্যয় কোনোভাবেই হবে না। তাই বিএনপি তথা যুক্তফ্রন্টের মিথ্যাচার সাধারণ মানুষের কাছে আর ধোপে টিকে নাই।
এদিকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে শুরু হয় ভোটের সাজসাজ রব। ঐক্যফ্রন্টও এ থেকে দূরে নয়, তাদের প্রার্থীরা এবার নানাভাবে নিজেদের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। নিজেদের দল, প্রতীকসহ প্রার্থীরা জনগণের কাছে নিজেদের পৌঁছাতে ডিজিটাল মাধ্যমেও প্রচার চালাচ্ছে। ভিডিও কনফারেন্স, এলাকাভিত্তিক উন্নয়নের বাস্তব অবস্থা ভিডিওর মাধ্যমে তুলে ধরছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। চাইছে নিজের মার্কা এবং দলের জন্য ভোট।
আওয়ামী লীগও এবার সরকারের ১০ বছরের উন্নয়নের চিত্র প্রচার করছে পরিকল্পিতভাবে। দেশ ও দেশের বাহির থেকেও এসব প্রচারণা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের মতো “ট্রাডিশনাল ওয়েতেই” শুধু প্রচার করা হচ্ছে না। ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস-এর মতো সোশ্যাল মাধ্যমগুলোও হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের প্রচার-প্রচারণার বিকল্প মাধ্যম। এসব সোশ্যাল মাধ্যমে দেশ বরেণ্য জ্ঞানী-গুণী শিল্পী, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়সহ সকল পেশার রুচিশীল মানুষই আওয়ামী লীগের উন্নয়ন প্রচার করছেন। প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ তরুণ ভোটারের দৃষ্টি আকর্ষণে আওয়ামী লীগের এই সকল উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
ঢাকা শহরসহ প্রতিটি শহর থেকে গ্রামে, চায়ের আড্ডায় এখন শুধুই ভোটের আলাপ। প্রতিটি আসনের প্রার্থীদের নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেষণ হচ্ছে চায়ের আড্ডাগুলোতে। কে কেমন, কাকে ভোট দিলে এলাকার উন্নয়ন হবে সব হিসেব কষে রাখছে সাধারণ জনগণ। মার্কার সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থীর ইমেজটাও এখন তাই মুখ্য বিষয়।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর ১৬ কোটি জনতা দেশের সার্বিক উন্নয়ন, উন্নয়নের পেছনে থাকা মার্কার অবদান এবং প্রার্থীর ইমেজ দেখে ভোট দিবে বলেই মনে হচ্ছে। তাই নতুন বছরে পদার্পণের একদিন আগে সংগঠিত হওয়া এবারের নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ট তাত্পর্যপূর্ণ এবং অর্থবহ। সবদিক বিবেচনা করলে দেখা যায়, ভোটের মাঠে, ভোটের ঢোল বাজতে শুরু করেছে।