নারী শিক্ষায় ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ

PIN নারী শিক্ষায় ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ

সময় এখন নারীর: উন্নয়নে তারা, বদলে যাচ্ছে গ্রাম-শহরে-কর্ম-জীবনধারা’—এ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ উদযাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। গর্বের বিষয় হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে নারী সমাজের অগ্রসরতায় বিস্ময়কর সফলতা অর্জনের ফলে বাংলাদেশ আজ ‘নারীর ক্ষমতায়নে’ বিশ্বের বুকে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। তিনি নারীর ক্ষমতায়নে এবং নারীর যথাযথ মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। অতীতের কোনো সরকার বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিক ইতিহাসে নারীর ক্ষমতায়নে এবং নারীর মূল্যায়নে এমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। শেখ হাসিনা যতবার ক্ষমতায় এসেছেন নারীর ক্ষমতায়নে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিয়েছেন। প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়িয়েছেন। এর পরেরবার কেবিনেট এবং একসময় স্পিকার হিসেবে নারীর যোগ্যতার প্রমাণ তুলে ধরলেন।

তিনি তাঁর নানামুখী কর্মকাণ্ড দিয়ে ইতোমধ্যে নিজেকে বলিষ্ঠ ও অপ্রতিদ্বন্দ্ব্বী নেতা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর বিপুল বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র্য বিমোচন, জনসাধারণের জীবনের মানোন্নয়ন, পরিবেশ বিপর্যয় রক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা, পার্বত্য শান্তিচুক্তি, জাতিসংঘে বিশ্বশান্তির মডেল উপস্থাপনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব অনন্য অবদান রেখেছেন তার জন্য দেশে-বিদেশে বহু প্রতিষ্ঠান তাঁকে পদক, সম্মাননা, উপাধিতে ভূষিত করেছে। নিজে সম্মানিত হওয়ার পাশাপাশি এসব পদক ও পুরস্কার অর্জনের ভেতর দিয়ে দেশকেও তিনি সম্মানিত করছেন।

কথায়  আছে—যে জাতি নারীদের শিক্ষিত করে তুলতে পারে, সে জাতির উন্নতি অবধারিত। বর্তমান সরকার শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমতা অর্জনে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশে শিক্ষায় ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। একসময় নারী শিক্ষা ছিল শুধু উচ্চবিত্ত ও শহরের কিছু পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সেই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে। প্রায় শতভাগ মেয়েই এখন স্কুলে যাচ্ছে। মেয়েদের জন্য বিদ্যালয়ে যে পরিবেশ থাকা দরকার, সরকার তা নিশ্চিত করেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় ৬০ ভাগ নারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশ প্রথম স্থানে অবস্থান করছে।

অর্থনৈতিক অগ্রগতি, অবকাঠামো নির্মাণ, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমন, ধর্মনিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার কারণে বর্তমান সরকারের প্রতি মানুষের সমর্থন বেড়েছে। এ পর্যন্ত কোনো হামলা-হুমকি ও বাধা তাঁকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারেনি। অকুতোভয় সাহসী জননন্দিত শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে উন্নয়নের মডেল হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকার কারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বপরিসরে নতুন মর্যাদায় অভিষিক্ত।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারের ৮ লাখেরও বেশি মুসলিম রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন। ইউএনএইচসিআর-এর শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছিলেন, শরণার্থীদের প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মমত্ববোধ দেখিয়েছে, তা তিনি তার কর্মজীবনে কখনো দেখেননি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ায় এরই মধ্যে বিশ্বের কাছে প্রশংসা পেয়েছে বাংলাদেশ। এবং ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর নারী উন্নয়নের জন্য নানাবিধ কর্মসূচি ও প্রকল্প গ্রহণ শুরু করেন। বাংলাদেশ সরকার তার জাতীয়, মাঝারি পর্যায়ের উন্নয়ন-পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে ২০২১ সাল (ভিশন ২০২১ নামেও পরিচিত) নাগাদ একটি মধ্য আয়ের রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। নারীকে রাজনীতিক ও আর্থনীতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করাকে নারীর ক্ষমতায়নের প্রধানতম চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়েছে। শেখ হাসিনা নারীর কার্যকর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তন্মধ্যে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উদ্যোগ, মাতৃত্ব ও স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১, নারীর প্রতি সহিংসতা দমন, অকাল এবং বাল্যবিবাহের সমাপ্তি, রাজনীতি, প্রশাসন এবং নিরাপত্তা প্রভৃতি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের যাত্রা শুরু হয় স্বাধীনতার পর থেকে। এ সময়ই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ গৃহীত হয়।  বঙ্গবন্ধু জাতীয় সংসদে সর্বপ্রথম নারীদের জন্য ১৫টি আসন সংরক্ষিত করেন। এটাই বাংলাদেশের ইতিহাসে নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। যার ফলে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের প্রথম সংসদেই নারীরা প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়। আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে দেশের নারীসমাজের উন্নয়নে কাজ করেছে। বর্তমান সরকার নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে। এখন মন্ত্রণালয়গুলোতে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। সব মন্ত্রণালয়ে নারী উন্নয়ন সংক্রান্ত ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে।

নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা নির্ধারণে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ৪টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে নারীর সামর্থ্য উন্নীতকরণ, নারীর অর্থনৈতিক প্রাপ্তি বৃদ্ধিকরণ, নারীর মতপ্রকাশ ও মতপ্রকাশের মাধ্যম সম্প্রসারণ এবং নারীর উন্নয়নে একটি সক্রিয় পরিবেশ সৃষ্টিকরণ।

নারীর কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ উন্নয়নেও সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। কর্মজীবী নারীদের সন্তানের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনের পাশাপাশি দুঃস্থ নারীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। তৃণমূল পর্যায়ে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের উত্পাদিত পণ্য সামগ্রীর মধ্যসত্ত্বভোগীদের কোনোরকম হস্তক্ষেপ ব্যতীত বাজারজাতকরণে  রাজধানী ঢাকায় ‘জয়িতা’ নামে একটি মেগা শপিং মল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গত তিন বছরে বাংলাদেশের ১ লাখ ৬৯ হাজার ৭১১ জন নারীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে যারা দেশে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করছে।

রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীর অংশগ্রহণের মান হিসেবে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ষষ্ঠ। জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা নারী উন্নয়নে আমাদের ভূয়সী প্রশংসা করছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৬’ অনুযায়ী ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭২তম।

নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক মাইলফলকসমূহ যেমন— বেইজিং ডিক্লারেশন, প্লাটফর্ম ফর অ্যাকশন ও এজেন্ডা ২০৩০সহ জাতিসংঘের ‘ফ্রেমওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ দ্যা নিউ আরবান এজেন্ডা’র আওতাভুক্ত ‘প্যারিস এগ্রিমেন্ট’ এবং উদ্বাস্তু ও অভিবাসী বিষয়ক নিউইয়র্ক ডিক্লারেশনের পূর্ণাঙ্গ, কার্যকর ও দ্রুত বাস্তবায়নে জন্য কাজ করছে সরকার।

নারীরা মেধা-মননে এগিয়ে যাচ্ছে কর্মক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করছে। জয়  করছে পর্বতমালা। পুরুষের পাশাপাশি সব ধরনের খেলায় আজকের নারীরা তাদের দক্ষতা দেখাচ্ছে  এবং অন্য প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে  নার?ীর ক্ষমতায়নে এগিয়ে  আছে বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আগামী ২০২১ সালের আগে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে— এটা নিশ্চিত। তাই  বাংলাদেশের সকল  নারীকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ  হাসিনার পাশে থেকে ও ঐক্যবদ্ধভাবে সকল অশুভ শক্তির মোকাবিলা করতে হবে। সামনে বাধা এলে তা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলায় সচেষ্ট থাকতে হবে।