বাংলাদেশ বিশ্বের মাঝে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে

PIN বাংলাদেশ বিশ্বের মাঝে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে

আজকের বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায় প্রকৃত মানবতাবাদী নেতা খুব বেশি নেই। আজ সারাবিশ্বে গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, প্রশংসার সাথে উচ্চারিত হচ্ছে যে ক’জন মানবতাবাদী নেতার নাম তার মধ্যে নিঃসন্দেহ শেখ হাসিনা অন্যতম। তিনি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে শরণার্থী সমস্যা মোকাবেলায় প্রধান নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। শরণার্থী সমস্যা মোকাবেলায় বিশ্বের অনেক উদারপন্থি ভাবধারী নেতা যখন কুমীরের কান্না করছেন তখন তিনি বাংলাদেশে মাত্র দু’সপ্তায় চার লাখ শরণার্থীকে শুধু আশ্রয়ই দেননি, দিয়েছেন খাবার এবং চিকিত্সাও। আমেরিকায় দাঁড়িয়ে যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করলেন তখন আমাদের মনে হলো শেখ হাসিনা এখন শুধুমাত্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন— তিনি সারাবিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত মানুষের পক্ষের সবচেয়ে বড় নেতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘বিশ্ব দুই শিবিরে বিভক্ত— শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’ পিতার আদর্শ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে আজ তিনি সারাবিশ্বের শোষিত মানুষের পক্ষে প্রধান নেতা।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কথা আজ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কণ্ঠে গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে উচ্চারিত হচ্ছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি বলেছেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যখন শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে দিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে, যার কারণে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে এমন একটি ব্যাপার অনুমোদন দেওয়া সহজ কথা নয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নুয়েরট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ যেভাবে সহায়তা দিচ্ছে সেটি প্রশংসার যোগ্য।’ এ থেকেই বোঝা যায় বাংলাদেশ একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকদের সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিনা ফ্রিল্যান্ড। বাংলাদেশ যা করেছে তা বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতির দেশ কল্পনাও করতে পারে না। তাঁরা আজ একবাক্যে স্বীকার করছেন, আসলে শেখ হাসিনাই শ্রেষ্ঠ মানবতাবাদী নেতা। সেদিকেই ইঙ্গিত করে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ‘সর্বত্রই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মানবিক ভূমিকা প্রশংসিত হচ্ছে।’

লন্ডনে বৃিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি নিকি হ্যালি জানিয়েছেন, ‘সহিংসতা থেকে পলায়নপর লাখো শরণার্থীর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। তাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নিয়ে যখন আঞ্চলিক পরাশক্তিগুলো নীরব তখন শেখ হাসিনা সোচ্চার হয়েছেন, তিনি তাদের সমস্যা সমাধানের উপায়ও বলে দিয়েছেন। তিনি মিয়ানমারের ভিতরে একটি নিরাপদ অঞ্চল গড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকট প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। তার ভাষণের পরেই মালয়েশিয়া, কাজাখাস্তান, তুরস্ক, বাহরাইন, আরব আমিরাত, কুয়েত, সৌদি আরব, তিউনিসিয়া, আয়ারল্যান্ড ও জার্মানি মিয়ানমার সংকট নিরসনের প্রশ্নে সরব হয়।

অক্সপিস এর শিক্ষাবিদ ড. লিজ কারমাইকেল শেখ হাসিনার মানবতাকে বিশ্বের অন্য নেতাদের জন্য অনুকরণীয় বলে রায় দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন তা সারাবিশ্বের জন্য অনুকরণীয় বার্তা। অক্সপিস এর আরেক শিক্ষাবিদ ড.এন্ড্রু গোসলার বলেছেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো যখন শরণার্থী নিয়ে নানা সমস্যায় জর্জরিত তখন বাংলাদেশ দেখালো কীভাবে এই সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়। শেখ হাসিনা হচ্ছেন মানবিক বিশ্বের প্রধান নেতা।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল লিখেছে, অং সান সুচি পশ্চিমা বিশ্বে অধিক পরিচিত একজন ব্যক্তি। তিনি শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন কিন্তু আজ তিনি সারাবিশ্বে নিন্দিত এবং তারই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাবিশ্বে প্রশংসিত।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.অলডো সিভিকো যথার্থই বলেছেন,‘নোবেল শান্তিজয়ী অং সান সুচি আর শেখ হাসিনার কার্যক্রম পাশাপাশি মূল্যায়ন করলেই বোঝা যায় কে বিশ্বশান্তির নেতা। একদিকে অং  সান সুচি মানবতার চরম সীমা লঙ্ঘনকারী সামরিক জান্তার রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর চালানো পৈশাচিক অত্যাচারকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন, অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার চরম হুমকির মধ্যেও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছেন।’

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ডেভিড এন হেম্পটন আরও স্পষ্ট ও বিস্তারিত করে বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শান্তির নতুন মাত্রা দিয়েছে। কেবল শান্তির স্বার্থেই দেশটি চরম অর্থনৈতিক ঝুঁকি নিয়েছে। এতগুলো শরণার্থী আশ্রয় দেওয়ার জন্য মানবিক হূদয় লাগে। জার্মানি যা করতে পারেনি শেখ হাসিনা তা করে দেখিয়েছেন।’ শেখ হাসিনা যে বিশ্ব শান্তির জন্য অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছেন তারই ইঙ্গিত করে অস্ট্রেলিয়ার পিস অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের প্রধান কর্মকর্তা ড. হেনরিক উরডাল বলেছেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকে বিশ্ব শান্তির নেতার মর্যাদা দেওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতার জননী বা ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ বলে আখ্যায়িত করেছে কয়েকটি ব্রিটিশ গণমাধ্যম। ২০১৬ সালে শান্তিতে নোবেল জয়ী কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট জুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্ব মানবতার বিবেক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ২০১৪-তে নোবেল জয়ী কৈলাস সত্যার্থী শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্ব মানবতার আলোকবর্তিকা’ হিসেবে তুলনা করেছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা যেভাবে মানবতার জন্য হাত বাড়িয়েছেন, তা আমাকে আপ্লুত করেছে।’ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ যথার্থই বলেছেন, ‘বাবার মতোই বিশাল হূদয় তাঁর। সেখানে ভালোবাসার অভাব নেই।’ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিলেন বাঙালির হূদয় কত বড়। তিনি বাঙালির গর্ব।’

গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বিশাল মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন, তা বিরল। তিনি যে একজন হূদয়বান রাষ্ট্রনায়ক তা তিনি আগেও প্রমাণ করেছেন, এবারও প্রমাণ করলেন।’

ইন্ডিয়া টুডের অনলাইন প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘শেখ হাসিনার হূদয় বঙ্গোপসাগরের চাইতেও বিশাল। যেখানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে কার্পণ্য নেই।’ এটা স্পষ্ট হয়েছে, শেখ হাসিনা বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানবতাবাদী নেতা। নির্যাতিত-নিপীড়িত-শোষিত মানুষের প্রধান আশ্রয় শেখ হাসিনা।