শেখ হাসিনার মুখজুড়ে বাংলাদেশের হাসি

PIN শেখ-হাসিনার-মুখজুড়ে-বাংলাদেশের-হাসি

১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পৃথিবীতে পা রাখেন শেখ হাসিনা। পরের বছর পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্ম। আর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠা লাভ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই তিনটি ঘটনা যেন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং ঘটনার পরম্পরা, আজকের ইতিহাস তাই বলে। বাংলার দামাল তারুণ্য স্বাধীকারের অধিকার আদায়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে মাঠে নামার প্ল্যাটফর্ম পেয়েছিল ছাত্রলীগের মাধ্যমে। এরপর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বহুমাত্রিক দেন-দরবার, সাংবিধানিক আলোচনা ও আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

পাকিস্তানি জান্তাদের ২৩ বছরের শোষণ-নির্যাতনের নাগপাশ থেকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পথে নিঃসন্দেহে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে এই সংগঠন দুটি, যেখানে আপামর জনতা মানুষ খুঁজে পেয়েছিল শেকল ভাঙার প্রতিশ্রুতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মুক্তির যে উড়ন্ত ডানায় উঠেছিল বাঙালি, পরবর্তীতে তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে উড়তে শুরু করেছে সেই স্বপ্নডানার উড়ালপঙ্খী। পিতা দিয়েছেন স্বাধীনতা, দাসত্ব থেকে মুক্তি; কন্যা দিয়েছেন আত্মমর্যাদা ও উন্নতি। আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে বলতে পারি, ‘আমি একজন গর্বিত বাঙালি।’

দেশ স্বাধীনের পরই দেশ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। সাড়ে তিন বছর কেটে যায় যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্রের অবকাঠামো ও নাগরিক মননের সংস্কার করতেই। এরমধ্যেও কিছু সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গুছিয়েছিলেন। উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতিকে এক সুতোয় গাঁথতে। তারপর তুমুল গতিতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যখনই তিনি পা বাড়াবেন, ঠিক তখনই পরাজিত পাকিস্তানি দালাল চক্রের ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে পরিবারসহ প্রাণ হারান বাঙালির মুক্তিদাতা এই বলিষ্ঠ অথচ সহজিয়া মানুষটি। তারপরই ফের থমকে যায় সবকিছু। অন্ধকার নেমে আসে। সাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতির মেঘে ঢাকা পড়ে স্বাধীনতার সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুটি। এভাবেই কেটে যায় আরও দু’দশক। পাকিস্তানি শোষকদের থাবা থেকে মুক্তি পেয়ে বাঙালি এবার নিজ জাতির দালালচক্রের কবলে পড়ে। তেইশ বছরের শেকল ছেঁড়ার পর ফের দুই দশকের অন্ধকারাচ্ছন্নতা ফুঁড়ে আশার আলো দেখাতে দৃশ্যপটে সফলভাবে উদিত হন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবনযাপন করেন তিনি, বিদেশ থাকায় ভাগ্যগুণে বেঁচে যান সেই কালরাতে। ছোট বোন শেখ রেহানা ছাড়া পরিবারের আর সবাইকে হারিয়েছেন তিনি। এই শোক বুকে নিয়ে প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবনযাপন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন তিনি। সামরিক জান্তা ও স্বৈরাচাররিবোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

পরবর্তীতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে। একাধিকবার রাষ্ট্রীয় পেটোয়া বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হন, বুলেট-বোমার মুখোমুখি হতে হয় তাকে, হয়তো অদৃশ্য কালিতে অন্য দৃশ্য লেখা ছিল তাই প্রাণে বেঁচে যান। তাকে বাঁচাতে আরও অনেকেই নিজের প্রাণ বিসর্জন দেন। তাকে ভালোবেসে প্রাণ দেওয়া যায়, একাধিকবারই এমন ঘটনা ঘটেছে। রাজনীতিকে শুধু কূটনীতিতে আবদ্ধ না রেখে ভালোবাসার সম্পর্কে রূপান্তরিত করেছেন তিনি। এজন্যই শেখ হাসিনা শুধু তথাকথিত রাজনৈতিক দলের প্রধান নন, শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, ক্রমেই তিনি হয়ে উঠেছেন একজন ‘স্টেটসম্যান’, তিনি হয়ে উঠেছেন আমজনতার জননেত্রী।

১৯৯৬ সালে নির্বাচনে জিতে সরকার গঠনের পর দুই দশক ধরে স্তব্ধ হয়ে থাকা স্বাধীনতার সূর্যকে ফের রাঙিয়ে তুলতে চাইলেন তিনি। এটাই যেন তার ব্রত ছিল। শুধু এ কারণেই যেনো রাজনীতির ধ্বংসস্তুপ থেকে ফের ফিনিক্স হয়ে উঠে এলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার এই প্রত্যাবর্তনে হাসি ফুটলো বাঙালির আপামর জনতার ঘরে ঘরে। শেখের বেটির জয়ধ্বনিতে মুখরিত হলো চারপাশ। শুরু হলো দেশকে নতুন নতুন করে গড়ে তোলার কাজ। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে এসে এবার নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো নিজের দলকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এনেছেন তিনি। চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন এই স্নেহময়ী নারী, স্বাধীন বাংলার ইতিহাসে কেউই এখন পর্যন্ত যা পারেননি। শুধু বাংলাদেশ না, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা শাসকও এখন আমাদের জননেত্রী।

তলাবিহীন রুটির ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশ অন্যতম উদীয়মান অর্থনীতির রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করেছেন। আঁধার তাড়ানো বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত দেশ আজ ডিজিটাল সেবার পরিপূর্ণ। ব্যাংক ভরে আসছে রেমিট্যান্স। দুর্নীতেতে চ্যাম্পিয়ন অবস্থায় যে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, সেই রাষ্ট্রকেই সমৃদ্ধির শেখরে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। তিনি আজ দেশরত্ন। আমাদের প্রাণকে আবেশিত করে যান প্রতিনিয়ত। এইতো কিছুদিন আগেও তুমুল আগুন সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়েছিল দেশে। কঠোর হস্তে তিনি তা নিয়ন্ত্রণ করেছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি তিনি যদি পাষাণ হতেন, তাহলে সব প্রতিপক্ষ এতোদিনে বিলুপ্ত হয়ে যেতো। রাজনীতির আড়ালে রাজনৈতিক দুর্বত্তদের হামলার শিকার হয়ে নিজে অজস্রবার মৃত্যুর মুখে পতিত হলেও তিনি ব্যক্তিগত ক্রোধের প্রকাশ ঘটাননি। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশকে বের করে এনে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন।

এমনকি নিজের দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা দুর্নীতিবাজদেরও ছেড়ে দেননি। আইনের আওতায় এনেছেন। আশ্রয় দিয়েছেন দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একটি মর্যাদাবান ও হৃদয়বান রাষ্ট্র হিসেবে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের ইমেজ বদলে গেছে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন মাথা উঁচু করে হাঁটছে। স্বাধীনতার মহান উদ্দেশ্য আজ পরিপূর্ণতা পেয়েছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসেও সহজ ছিল না এই যাত্রা, অনেক কণ্টকাকীর্ণ পথ হেঁটেছেন তিনি। ষড়যন্ত্রকারীদের দুর্নীতির অভিযোগ খণ্ডন করে নিজেদের খরচে পদ্মাসেতুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। যে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল, তারাই আজ ব্লাঙ্ক চেক নিয়ে আমাদের পিছে ঘুরছে।

স্বাধীনতা সংগ্রামে অগ্রভূমিকা রাখা ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের চেয়েও বয়োজ্যেষ্ঠ আমাদের নেত্রী। নেত্রীর জন্মের পরের দুই বছরে এই দুই প্রতিষ্ঠানের জন্ম। তাই এদের যে কাউকে এখন শাসন করার পূর্ণ অধিকার রাখেন তিনি। নৈতিক বিচারে আজ বাংলাদেশের মানদণ্ডে পরিণত হয়েছেন আমাদের প্রিয় নেত্রী। তার মুখজুড়ে শোভা পায় এদেশের প্রতিটি মানুষের হাসি। এই মৃন্ময়ী হাস্যোজ্জ্বল মুখ প্রশস্ত হোক আরো, দুঃখ ভুলে প্রাপ্তির পরিপূর্ণতায় প্রাণখুলে সুখের হাসি হাসুক জাতি। ৭৩ বছর বয়সে পা রেখেও দীপ্ত কণ্ঠে বলুন ‘এটি একটি সংখ্যা মাত্র’। শুভ জন্মদিন, শুভ কামনা প্রিয় নেত্রী।

আরো পড়ুন
জঙ্গিবাদ এবং নারীদের ভূমিকা