বিশ্বমঞ্চে উন্নত শির

PIN বিশ্বমঞ্চে-উন্নত-শির

‘নারীর ক্ষমতায়নের কথা মুখে বললে হয় না। এটা অর্জন করে নিতে হয়।’উক্তিটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেছিলেন গণভবনে সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রার্থী নারীনেত্রীদের উদ্দেশে। তবে উক্তিটি সবার জন্যই। ক্ষমতায়ন মুখে মুখে হয় না, কেউ কাউকে দিতেও পারে না। এটা অর্জন করেই নিতে হয়। নারী তখনই ক্ষমতায়নের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে যখন সে এটার জন্য নিজেকে যোগ্য হিসেবে তৈরি করে নিতে পারে। এইযে বললাম নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলা, এখানেই আসে পারিপার্শ্বিক সাহায্য সহযোগিতার ব্যাপারটা। নারীকে যোগ্য করে গড়ে তুললেই নারীর ক্ষমতায়ন হয়, নারী দেশ সমাজ রাষ্ট্রের জন্য পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করতে পারে।

ক্ষমতায়নের জন্য নারীকে যোগ্য করে তুলতে দরকার হয় শিক্ষার, সচেতনতা বৃদ্ধির এবং প্রশিক্ষণের। নারীর ক্ষমতায়ন নারীদেরকে সমাজে বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে জীবন নির্ধারণমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ দেয়।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নের একজন অন্যতম আইকন। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও আজ অনেকাংশেই সক্রিয় যা শুধু মাত্র সম্ভব হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা মনোবল এবং কঠোর পরিশ্রমের জন্য। আর এর জন্যে বাংলাদেশ সরকারের রয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা ও কর্মসূচি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনাতেই আওয়ামী লীগ সরকার ও এর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে। যার মধ্যে রয়েছে নারী সহায়ক আইন তৈরি, সেই আইনের সুফল নারীকে পৌঁছে দেওয়া, সচেতনতামূলক বিভিন্ন প্রোগ্রাম এবং ক্ষেত্র বিশেষে আইনি সহায়তা দেওয়া।

একটু খেয়াল করলেই দেখবো কর্মজীবী নারীদের ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা শেখ হাসিনার কল্যাণেই আমরা পেয়েছি এবং তিনি এর মেয়াদ আরো বাড়াতে আগ্রহী বলেই জেনেছি। সন্তানের পরিচয়ের ক্ষেত্রে আগে যেখানে শুধু বাবার নামটি থাকলেই কাজ চলে যেত এখন সেখানে মায়ের নামও বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে। এটি সামাজিক ভাবে বাংলাদেশের নারীদের মা পরিচয়কে আরো বেশি মহিমান্বিত করেছে বলেই আমার ধারণা। নারী পুরুষের সমান অধিকার ব্যাপারটা যেখানে শুধু সংবিধানেই ছিল সমাজে না, সেটাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন নিরলস ভাবে।

আজ থেকে ১০ বছর আগেও তিনি যখন মানুষের ভালবাসায় সরকার গঠন করলেন তখনো বাংলাদেশের নারীদের অবস্থা এতোটা ভাল ছিল না, এখন তারা যতটা আছে। এর বড় কারণ অন্য সরকার গুলো নারীকে নিয়ে সেভাবে ভাবেই নাই। নারীকে তারা চার দেয়ালে বন্দি রাখতেই ভালবাসতেন। একটা সরকারের যেখানে তাঁর প্রতিটা নাগরিকের সমান অধিকার পাওয়ার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব থাকে সেখানে বিএনপি জামায়াত সরকার বরং নারীকে পিছিয়ে রাখতে সব রকমের ব্যবস্থাই করে রেখেছিল। তাই জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেই চাকরি ক্ষেত্রে নারী যেন যোগ্যতার মাপকাঠিতে উতরে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা নিলেন, নারীর জন্যই আলাদা কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি করলেন, তাদের প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠীতে রুপান্তরে নানা কর্মসূচি হাতে নিলেন। এমনকি গ্রামীণ নারীরাও যেন নিজেদের জ্ঞান দিয়ে ছোট ব্যবসা পরিচালনা করে সংসারে অবদান রাখতে পারেন সেজন্য সহজ শর্তে নারীদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করলেন।

বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বাংলাদেশের গ্রামীণ নারীর ভাগ্য উন্নয়নই যে বেশি দরকার সেটা বুঝতে পেরেছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তাই গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে নিয়েছেন বিভিন্ন পদক্ষেপ। মেয়েদের পড়ালেখার ব্যবস্থা যেমন সহজ করেছেন একই সাথে সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ১ কোটি ৩০ লাখ শিশুর বৃত্তির টাকা মায়েদের অ্যাকাউন্টে পাঠানোর মতো যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনাই নিয়েছেন। গ্রামীণ নারীর স্বাস্থ্য নিয়েও কাজ করে যাচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার। খুব সহজেই যেন নারীরা স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তা পায় সেজন্য গড়ে তোলা হয়েছে কমিউনিটি স্বাস্থ্য সেবা ক্লিনিক। অবহেলিত, বঞ্চিত, নিগৃহীত জনগোষ্ঠীদের জন্য মাতৃ-স্বাস্থ্য ভাউচার নামের একটি স্কিম তৈরি করেছে শেখ হাসিনার সরকার যার অধীনে তিনটি প্রসব পূর্ব চেকআপ, দক্ষ দাইয়ের অধীনে নিরাপদ জন্মদান, একটি প্রসব পরবর্তী চেকআপ এবং যাতায়াত খরচ বহন করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। যা দেশে মাতৃমৃত্যু অবদান রাখছে।

শহুরে হোক বা গ্রামীণ, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য সব চেয়ে বেশি দরকার ছিল নারীকে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তোলা। আর এর জন্য শেখ হাসিনা সরকার নারীদের জন্য সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণে যেন তাদের পরিবার আগ্রহী হয় সেজন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মেয়েদের ভর্তির হার এখন ৫১% এবং মাধ্যমিকে ৫৩% । এই হিসেবই বলে দিচ্ছে গত দশ বছরে শেখ হাসিনার সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর সফলতা।

বাংলার নারীকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্য যা যা সহযোগিতা দেওয়া প্রয়োজন তাঁর সবই নিশ্চিত করে যাচ্ছে আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী। আজ তাঁর জন্মদিনে তাই আমার প্রত্যাশা থাকবে আপনি শতবর্ষী হোন বাংলাদেশের নারীকে বিশ্বমঞ্চে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস যোগাতে।