আওয়ামী লীগ : গণমানুষের স্বপ্নের ঠিকানা

PIN silvia parveen lenny

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই উপমহাদেশের অন্যতম প্রচীন এবং ঐতিহ্যবাহী একটি রাজনৈতিক দল। ২৩ জুন ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যে দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, প্রতিষ্ঠার ৬ বছর পর আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে “মুসলিম” শব্দটি বাদ দিয়ে অসাপ্রদায়িক চেতনায় যে দলটির পথচলা শুরু হয়েছিল, আজ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী সেই দলটি ৭০ বছরে পূর্ণ করল।

এই ৭০ বছরের পথচলায় দলটি নানান চড়াই উতরাই পেড়িয়ে আজ গণমানুষের প্রাণের রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েই গণমানুষের দলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

সরকার পরিচালনায় বাংলাদেশ আওয়ামী যেভাবে সফলতা দেখিয়ে যাচ্ছে তৃণমূলকে সরকাররের এই সফলতার সঙ্গী করে নিতেও যেন আওয়ামী লীগ কোন কার্পণ্য না করে। আর এর জন্য প্রয়োজনে তৃণমূলের নেতা কর্মীদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। দলের মধ্যেই জ্ঞান চর্চার ব্যবস্থা রাখতে হবে। সাধারণ মানুষের সাথে যেন নেতা কর্মীরা সাধারণ মানুষের মতোই মিশতে পারে সেই শিক্ষা কেন্দ্র থেকেই দিতে হবে। জনগণ থেকে যেন প্রাণের আওয়ামী লীগ দূরে সরে না যায়।

বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ইতিহাস আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একই সুতায় গাঁথা। বাংলাদেশের ইতিহাস কখনই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে লেখা সম্ভব না। আর দেশের জন্য এই দলটির নেতা-কর্মীদের ত্যাগ-তিতিক্ষা-সংগ্রামী ভূমিকা ইতিহাসবিদিত।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের ৪ বছর পরেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকেও নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল পাকিস্তানের পরাজিত প্রেতাত্মারা।

পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশ ছিল হত্যা আর ষড়যন্ত্রের বাংলাদেশ। মাত্র যুদ্ধ জয় করা বাংলাদেশ যখন তার জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছিল, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বপ্নগুলোকে তখন হায়েনার দল ক্ষতবিক্ষত করার চক্রান্তে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আর তাই জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যার করা হলো, সংবিধানকেও কাটাছেঁড়া করা হলো যেন বাংলাদেশ যে আদর্শের জন্য স্বাধীন হলো সেই আদর্শই আর না থাকে।

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকার, আলবদর ও আল শামস্ বাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধীদের অপরাধের বিচারের জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭২ সালে সারাদেশে ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এই আইনে ৩৭৪৭১ জনকে গ্রেফতার এবং অনেককে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিও প্রদান করা হয়েছিল।

১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অবৈধ ক্ষমতালোভী খুনি সরকার দালাল আইন বাতিল করে দিয়ে মানবতাবিরোধীদের বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়। যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়ে যায় এই মানবতাবিরোধী অপরাধীরা। তারই ফলশ্রুতিতে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে বুক ফুলিয়ে চলা শুরু করে কাদের মোল্লা, মুজাহিদ, গোলাম আজমদের মতো চিহ্নিত আত্মস্বীকৃত যুদ্ধাপরাধীরা।

টানা ২১ বছর এদেশের মানুষকে অন্ধকারে থাকতে হয়েছিল। তবে একটা দেশকে স্বাধীনতা দেওয়া দলকে চাইলেও মানুষের হৃদয় থেকে মুছে ফেলা যায় নি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আবার জেগে উঠে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে যেখানে রেখে গিয়েছিলেন, ১৯৯৬ এর নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করে ২১বছরের অন্ধকার যাত্রার পর শেখ হাসিনা সেই জায়গা থেকেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে থাকেন।

এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনই হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক অঙ্গীকার। ১৯৭৫ এর পর এই প্রথম বাংলাদেশ জনগণের সরকার পায়। দেশ যখন রাজনৈতিক ভাবে স্থিতিশীলতা অর্জনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে তখনই শুরু হয় সেনানিবাসে জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং তাদের “বি টিম” যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতের নানামুখী ষড়যন্ত্র। সেই ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, হেরে যায় ২০০১ এর জাতীয় নির্বাচনে। বাংলাদেশ এর শাসন ক্ষমতায় আবার ফিরে আসে হায়েনারা।

আওয়ামী লীগ এই পরাজয় থেকে দ্রুত শিক্ষা নেয়। তাই ২০০৬ এর নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতের ষড়যন্ত্র ধোপে টিকে না। সেই অস্থির সময়ে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকার কথা আমাদের সবারই মনে আছে। দেশকে যখন সঠিক পথে রাখার দায়িত্ব তিনি নিজ কাঁধে তুলে নিতে পারতেন তা না করে নিজেই রাষ্ট্র ক্ষমতার দখল নিতে উঠে পড়ে লাগলেন। বাংলাদেশ আবার চলে গেল সেনাবাহিনীর মেজরদের হাতে।

কিন্তু আওয়ামী লীগের মনোবল কোনোভাবেই ভাঙা গেল না। তার সভানেত্রীকে গৃহবন্দী করে রাখার পরেও না। আওয়ামী লীগের রাজনীতির কাছে পরাজিত হল সেনাশাসিত সরকার। নির্বাচন দিতে বাধ্য হলো, আর সেই নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকেই বেছে নিল বাংলাদেশের জনগণ।

সেই থেকে পর পর তিন বার সরকার গঠন করলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই সময়ে বাংলাদেশ কৃষিতে যেমন ব্যাপক সাফল্য দেখিয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হল, একই ভাবে আধুনিক বিশ্বে সাথে তাল মিলিয়ে দেশকে দ্রুত এগিয়ে নিতে “ডিজিটাল বংলাদেশ” গঠনের কাজ শুরু করলো। আজ ২০১৯ এ এসে যখন দেখি বাংলাদেশের তরুণরা ঘরে বসেই সুলভ ইন্টারনেটের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বনির্ভর করে গড়ে তুলছে তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না “ডিজিটাল বাংলাদেশ” কোন অলীক কল্পনা ছিল না।

বাংলাদেশের দৃশ্যমান উন্নয়নে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অবদান এখন বিরোধী প্রতিপক্ষরাও মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। এই সফলতা আমাকে আন্দোলিত করে, কিন্তু এর মাঝেও আওয়ামী লীগের অন্তর্গত কিছু বিষয় আবার আমাকে কষ্টও দেয়। পরপর ৩ মেয়াদে সরকারে থেকেও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নিজেদের বঞ্চিতই ভাবে। নিজেদের মধ্যকার কোন্দল গুলো মাঝে মাঝেই দৃশ্যমান হয়ে পড়ে।

সরকার পরিচালনায় বাংলাদেশ আওয়ামী যেভাবে সফলতা দেখিয়ে যাচ্ছে তৃণমূলকে সরকাররের এই সফলতার সঙ্গী করে নিতেও যেন আওয়ামী লীগ কোন কার্পণ্য না করে। আর এর জন্য প্রয়োজনে তৃণমূলের নেতা কর্মীদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। দলের মধ্যেই জ্ঞান চর্চার ব্যবস্থা রাখতে হবে। সাধারণ মানুষের সাথে যেন নেতা কর্মীরা সাধারণ মানুষের মতোই মিশতে পারে সেই শিক্ষা কেন্দ্র থেকেই দিতে হবে। জনগণ থেকে যেন প্রাণের আওয়ামী লীগ দূরে সরে না যায়।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের হাত ধরেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এক যুগ আগেও যখন অর্থনীতিবিদরা কল্পনা করতে পারতো না বাংলাদেশ নিন্ম আয়ের দেশ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে, সেখানে বাংলাদেশ এখন পরিকল্পনা করে উচ্চ আয়ের দেশের কাতারে নিজেদের নিয়ে যাওয়ার। এসবই সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তির রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায়। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, অসংখ্য ফ্লাইওভারসহ সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে চলেছে আওয়ামী লীগ সরকারের এই তিন মেয়াদে। গ্রামেও পৌঁছে যাচ্ছে শহরের সকল সুযোগ সুবিধা।

তাই আপামর জনগণের মতো আমারও আশা থাকবে এই আওয়ামী লীগের দিক নির্দেশনাতেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তার অভিষ্ট লক্ষ্যে। আমরা আর কখনো জঙ্গিবাদ, আগুন সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হবো না। বিশ্বে বাংলাদেশ হবে উন্নয়নের, শান্তির, অসাম্প্রদায়িকতার রোল মডেল।