ইতিহাসের দায়মোচন ও রাজাকারমুক্ত নির্বাচন

PIN Silvia Parveen Lenny

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার আগে তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার। আমরা দেখলাম তারা ক্ষমতায় এসেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ও প্রধান প্রধান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে। মূল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পর বাংলাদেশ অনেকটাই কলঙ্কমুক্ত হয়েছে বলে স্বস্তি স্বীকার করেছেন দেশের মানুষ।

আমাদের অন্যতম দাবি ছিল ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী এসব যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত ইসলামীকে এদেশের রাজনীতি থেকে বিদায় করবে এই সরকার। সেই ব্যবস্থাও করেছিল আওয়ামী লীগ।

যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদেরকে কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনয়ন না দেয়ার দাবি ছিলো তরুণ প্রজন্মের। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের সাথে আমাদের দেখতে হয়েছে আওয়ামী লীগের শত চেষ্টার পরও রাজাকারদের পুরোপুরি দমন করা যায়নি বিএনপির কারণে।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান যেমন জামায়াত ও দলটির যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতির সুযোগ করে দিয়েছিলেন এদেশের ঠিক একই কায়দায় আবারও জামায়াত যখন মৃতপ্রায় তখনই ত্রাণকর্তা হিসেবে দৃশ্যপটে হাজির হয়েছে বিএনপি। একাত্তরের সেইসব যুদ্ধাপরাধী যারা বিচারের সম্মুখীন এখনও হননি তাদের কয়েকজনকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এর আগেও আমরা দেখেছি যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছিল তখন ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে বেগম খালেদা জিয়া রাজাকারদের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছিলেন।

রাজাকারদের টিকিয়ে রাখার এসব ঘটনায় তরুণ প্রজন্ম ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি প্রচণ্ডভাবে হতাশ হয়েছে। আমাদের আশা ছিলো হয়তো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পর ও জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করার পর তাদেরকে প্রত্যেকটি দলই বর্জন করবে।

এদেরকে বর্জনের মাধ্যমে দেশের সরকারি দল ও বিরোধীদল দুটোই পুরোপুরি রাজাকারমুক্ত হবে। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে হলেও রাজনীতি থেকে রাজাকারদের পুরোপুরি বিদায় ঘটবে। কিন্তু এখন বিএনপির কল্যাণে তারা সংসদ সদস্য প্রার্থী। তারা বহাল তবিয়তেই রাজনীতি করছে।

রাজনীতিতে যে শুভ পরিবর্তন আমরা চাই তা একটি দলের শত ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব নয় তা এই ঘটনায় প্রমাণ হয়। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের যে ভূমিকা রাখা উচিত তারা তা ঠিকমত পালন করলেও বিএনপিসহ তথাকথিত সিভিল সোস্যাইটির প্রতিনিধিদের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের বিপরীত ভূমিকার কারণে আজ রাজাকার ও দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানরা সংসদ সদস্য প্রার্থী।

আমি মনে করি ঐক্যফ্রন্ট গঠনের উদ্দেশ্যই ছিল নিবন্ধন বাতিলের কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারা জামায়াত ইসলামির রাজাকারদের নির্বাচন করার সুযোগ করে দেয়ার চেষ্টা। লক্ষ্য করলে দেখবেন বিএনপি’র নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করছেন একসময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে মুখে ফেনা তোলা কিছু নেতা। তারা আদর্শচ্যুত হয়েছেন অনেক আগেই তাতে সন্দেহ নেই।

কাদের সিদ্দিকী নিজে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কলম ধরেছেন ও টিভি টকশোতে বলেছেন একাধিকবার। ড. কামালের মেয়ে ও মেয়ের জামাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় এই বিচারিক প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করতে জামায়াতের লবিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। তাই তাদের হাতে গড়া এবারের ঐক্যফ্রন্ট যে জামায়াতকে বা রাজাকারদেরই আবার রাজনীতিতে সুযোগ করে দেয়ার চেষ্টা তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

এছাড়াও খেয়াল করলে দেখা যায় ড. কামাল, কাদের সিদ্দিকীরা নামে মাত্র কয়েকটি আসনে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করছেন কিন্তু তাদের চেয়ে কয়েকগুণ আসনে নির্বাচন করছে জামায়াত। তাতেও আমাদের বুঝতে সুবিধা হয়েছে যে এসব উদ্যোগ আসলে জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ দানেরই প্রচেষ্টা!

তবে আমাদের একটি আশার জায়গা আছে। বরাবরের মতই এবারও রাজাকারদের রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে তরুণ সমাজ। গত কয়েকমাসে আমরা রাজাকারদের রাজনীতির বিরুদ্ধে গণজোয়ার দেখতে পারছি।

সংস্কৃতি কর্মী, অভিনেতা, অভিনেত্রী, লেখক, সাহিত্যিক, গায়ক থেকে শুরু করে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ রাজাকারদের রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তারা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।

দেশের সকলেই আজ একমত হয়েছেন এদেশে স্বাধীনতার চেতনা টিকিয়ে রাখতে হলে শেখ হাসিনাই একমাত্র নেতা যার নেতৃত্বে বিনা দ্বিধায় মানতে হবে। আমরা দেখে আশান্বিত হচ্ছি যে, তারা শুধু মতামত দিয়েই ক্ষান্ত নন, তারা এবার রাজাকারদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে প্রচার প্রচারণাও চালাচ্ছেন।